যে ৭টি বিষয় না জানলেই নয় গাড়ির যত্নে ! 7 necessary steps for car care !


আপনার প্রিয় গাড়িটি আপনার দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেক্ষেত্রে ড্রাইভ করার পাশাপাশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লক্ষ্য রাখা উচিত। অন্তত একজন গাড়ি চালকের  জানা  উচিত যে, তিনি কিভাবে গাড়ির বিভিন্ন বিষয়গুলোতে খেয়াল রেখে কি কি পদক্ষেপ নিবেন।  মূলত গাড়ি  নিরাপদে  ব্যবহার  করার জন্যই এর  বিশেষ যত্ন এবং কিছু অত্যাবশ্যকীয় দিকে খেয়াল করাটা জরুরী। যদি গাড়ি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ এবং যত্ন না করা হয়, তবে দেখবেন এটা রিপেয়ারের পিছনেই অনেক বেশি টাকা খরচ হয়ে যাবে। দেখে নিন একটি গাড়ির যত্নের ক্ষেত্রে কোন সাতটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল করতে হবে।

1. ব্রেকগুলো পরীক্ষা করুন

গাড়ির ব্রেকগুলোর প্রতি বিশেষ নজর দিন। কারণ গাড়ির ব্রেকগুলো আস্তে আস্তে ক্ষয় হয়ে যায়। তাই অন্তত বছরে দুই বা তিনবার করে হলেও ব্রেকগুলোর অবস্থা ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। তবে নিয়মিত দীর্ঘ দূরত্বের পথে যাতায়াত করলে এটা আরও বেশি করে খেয়াল করতে হবে। এক্ষেত্রে কোন প্রকারের সমস্যা যুক্ত মনে হলেই সার্ভিসিং করান। এছাড়াও সবসময় গাড়ির ফিটনেস রিপোর্ট, সার্ভিসিং হিস্টোরি এবং গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টসমূহ সাথে রাখুন। সেক্ষেত্রে একটি ছোট বুকলেট সাথে রাখতে পারেন। এই  বুকলেটটি হাতের কাছে রাখতে তা গাড়ির প্যাসেঞ্জার সিট এবং সেন্টার কনসোলের মাঝে রাখতে পারেন। তাতে দরকারের সময় তা খুব সহজেই খুঁজে পাবেন।

2. গাড়ির ফ্লুয়িডগুলো চেক করুন

আপনার গাড়ির অত্যাবশ্যকীয় ফ্লুয়িডগুলো পরীক্ষা করে দেখুন। এগুলো যদি পরিমাণে কম থাকে, তবে তা অবশ্যই পূর্ণ করে নিতে হবে। ইঞ্জিনের তেলের পরিমাণ পরীক্ষা করে দেখে তা কম থাকলে ভরে নিন। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন ট্যাংকটি যেন অতিরিক্ত ভরে না যায়। কুল্যান্ট, ট্রান্সমিশন ফ্লুয়িড, ব্রেক ফ্লুয়িড ইত্যাদিও চেক করে নিলে ভাল হয়। ইঞ্জিন ট্যাংকের উষ্ণ অবস্থা এবং চলমান তরল স্তরের পরীক্ষা করুন। এছাড়াও ব্রেক তরল জলাধার এবং পাওয়ার স্টিয়ারিং পাম্প পরীক্ষা করে দেখুন। এতে কোন প্রকারের লিক থাকলে, তা অতিসত্বর মেরামত করে নিন।

যে ৭টি বিষয় না জানলেই নয় গাড়ির যত্নে ! 7 necessary steps for car care !

3. নিয়মিত ইঞ্জিনের তেল চেঞ্জ করুন

নিয়মিত গাড়ির ইঞ্জিনের তেল পরিবর্তন করতে ভুলবেন না। এক্ষেত্রে ম্যানুয়ালের নির্দেশনাগুলো ভাল করে দেখুন। সাধারণত ইঞ্জিন অয়েল পাঁচ হাজার কিলোমিটার কিংবা তিন মাস পর পর বদলানো উচিত। আর অয়েল ফিল্টারও পর্যায়ক্রমে চেঞ্জ করে ফেলতে হবে। নোংরা তেল এবং ময়লা এয়ার ফিল্টারের কারণে ইঞ্জিনের বিশাল ক্ষতি হয়। এছাড়াও আপনার গাড়ির ফুয়েল খরচের হিসেব রাখতে প্রহরী ভিটিএসের সাহায্য নিতে পারেন। প্রহরীর ফুয়েল মনিটরিং ফিচারের মাধ্যমে গাড়িতে কতটুকু ফুয়েল অবশিষ্ট আছে এবং কতটুকু খরচ হয়েছে তা বিস্তারিত ভাবে জানতে পারবেন।

4. সবসময় গাড়ি পরিষ্কার রাখুন

সবসময় গাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত। অন্তত সপ্তাহে একদিন গাড়ি ধুয়ে ফেলতে চেষ্টা করুন। আর কখনো  শুকনো অবস্থায় গাড়ি পরিষ্কার করবেন না। এতে কারের পেইন্টের কালার দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়াও নিয়মিত গাড়ির জানালার গ্লাস, উইন্ডশীল্ড, রিয়ার ভিউ আয়না, হেডলাইট ও ভিতরের সবকিছু পরিষ্কার করুন। এবং এসব ঠিকভাবে কাজ করে কিনা, তাও পরীক্ষা করে দেখুন। যদি কোন পার্টস ত্রুটিপূর্ণ বলে মনে হয়, তবে তা দ্রুত কোন অভিজ্ঞ মেকানিক দিয়ে রিপেয়ার কিংবা দরকার পড়লে চেঞ্জ করে ফেলতে পারেন।

যে ৭টি বিষয় না জানলেই নয় গাড়ির যত্নে ! 7 necessary steps for car care

5. টায়ারের প্রেশার চেক করে দেখুন

দুর্ঘটনা এড়াতে গাড়ির টায়ারের সঠিক যত্ন এবং রক্ষণাবেক্ষণ করাটা জরুরী। গাড়ির টায়ারের প্রেশার কিভাবে চেক করতে হয় সেটা শিখে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে ডিজিটাল টায়ার চাপ গেজ গাড়িতে রাখুন। অন্তত মাসে একবার হলেও টায়ারের প্রেশার মাপতে চেষ্টা করুন। তবে দূরপথের ভ্রমণের ক্ষেত্রে অবশ্যই আগে থেকেই সমস্ত টায়ারের চাপ চেক করে নিবেন। অনেকসময় আন্ডার ইনফ্লাটেড টায়ারের কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

যে ৭টি বিষয় না জানলেই নয় গাড়ির যত্নে ! 7 necessary steps for car care

6. প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস সাথে রাখুন

অপ্রত্যাশিতভাবে যেকোন ধরণের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন। সেজন্য যেকোন ইমার্জেন্সির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস আপনার সাথে রাখা ভাল। একটি মাঝারি সাইজের ডুফেল ব্যাগে (Duffel Bag) বিভিন্ন দরকারি জিনিস ভরে গাড়িতে রাখতে পারেন। সেক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জামাদি, দুই লিটারের পানির বোতল, ভাল আলো দেয় এমন টাইপের টর্চ লাইট, রেইন Poncho, শক্ত টাইপের দড়ি ইত্যাদি জিনিস সাথে রাখতে চেষ্টা করুন।

7. গাড়ির ইনস্যুরেন্স করেছেন তো

গাড়ির ক্ষেত্রে ইনস্যুরেন্স করে রাখতে ভুলবেন না। এতে যেকোন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার খরচ ইনস্যুরেন্সের মাধ্যমে  পাওয়া যাবে। রেজিস্ট্রেশন পেপারের কপি, সেফটি এবং ইন্সপেক্টশন ডকুমেন্টসমূহ অবশ্যই গাড়িতে রাখবেন। এছাড়াও  মেইনটেনেন্স রিসিটও সাথে রাখতে চেষ্টা করবেন। এগুলো অন্য কোথাও না রেখে বরং গাড়িতে রাখলেই ভাল হবে। দূরপাল্লার ভ্রমণে কিংবা দীর্ঘযাত্রার পথে এগুলো অবশ্যই সাথে রাখবেন। আর এর ফলে কোন ধরণের ভোগান্তিতেও পড়বেন না।

একটি গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা পরিচর্যার ক্ষেত্রে নানা দিক খেয়াল রাখা প্রয়োজন। আপনার নিরাপত্তা এবং গাড়ির সুরক্ষার দিকগুলো চিন্তা করে সবসময় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। এবং সবদিকে খেয়াল রেখে সতর্কতার সাথে ড্রাইভিং করলে, আপনি যেমন নিরাপদে থাকবেন তেমনি আপনার গাড়িটিও ভাল থাকবে।